শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা: আর থাকছে না শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। এনটিআরসিএ বিশেষ বিসিএসের আদলে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেবে। জানুন নতুন নিয়ম, পরীক্ষার পদ্ধতি এবং বয়স গণনার প্রক্রিয়া।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাতিল: নতুন নিয়োগ পদ্ধতি | NTRCA
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। প্রচলিত নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিশেষ বিসিএসের আদলে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নতুন বিধি কার্যকর হলে, ‘নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তি’র পরিবর্তে সরাসরি ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হবে এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে বয়স গণনা শুরু হবে।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে যুগান্তকারী পরিবর্তন
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর জন্য একটি বড় খবর। বহু বছরের প্রচলিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের পথে হাঁটছে সরকার। এর পরিবর্তে আসছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিশেষ বিসিএসের আদলে সম্পূর্ণ নতুন এক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক প্রণীত এই নতুন বিধিমালা বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে প্রার্থীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, বিশেষ করে বয়সসীমা নিয়ে জটিলতার অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলুন, এই যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। শিক্ষাখাতের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সর্বশেষ খবর আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
কেন এই পরিবর্তন? (পুরানো পদ্ধতির জটিলতা)
বর্তমান পদ্ধতিতে প্রার্থীদের দুটি প্রধান ধাপে এগোতে হয়, যা অনেক সময় দীর্ঘসূত্রিতা এবং হতাশ তৈরি করে।
- প্রথম ধাপ: প্রথমে এনটিআরসিএ আয়োজিত প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে নিবন্ধন সনদ অর্জন করতে হয়।
- দ্বিতীয় ধাপ: এরপর গণবিজ্ঞপ্তির জন্য অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সনদ অর্জন করার পর গণবিজ্ঞপ্তি আসতে দেরি হওয়ায় প্রার্থীদের বয়স ৩৫ বছর পেরিয়ে যায় এবং তারা আর নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন না।
এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং বয়সসীমার জটিলতা দূর করতেই এনটিআরসিএ সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতিতে যাচ্ছে।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হবে? (ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা)
সংশোধিত বিধিমালা কার্যকর হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন আসবে।
‘নিবন্ধন’ নয়, সরাসরি ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’
ভবিষ্যতে আর ‘নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হবে না। এর পরিবর্তে, শূন্য পদের ভিত্তিতে সরাসরি ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ জারি করবে এনটিআরসিএ। অর্থাৎ, প্রার্থীরা সরাসরি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দেবেন।
বয়স গণনার নতুন নিয়ম
প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির খবর হলো বয়স গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকেই প্রার্থীর বয়স গণনা করা হবে। ফলে, পরীক্ষা এবং চূড়ান্ত সুপারিশ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলেও কোনো প্রার্থীর বয়স নিয়ে সমস্যা হবে না।
ভাইভা এবং অপেক্ষমাণ তালিকা
- ভাইভার সুযোগ: শূন্যপদের সংখ্যার দ্বিগুণ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) জন্য ডাকা হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ৫০ হাজার পদ খালি থাকে, তবে এক লাখ প্রার্থী ভাইভা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
- অপেক্ষমাণ তালিকা: চূড়ান্ত ফলে শূন্যপদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে একটি অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করা হবে। এর ফলে, যদি কোনো নির্বাচিত প্রার্থী চাকরিতে যোগদান না করেন, তবে সেই শূন্যপদটি অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পূরণ করা হবে।
পরীক্ষার ধরনেও আসছে বড় পরিবর্তন
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরীক্ষার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আগের মতো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা আর হবে না। অনেকটা বিশেষ বিসিএসের মতো প্রক্রিয়া চালু করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা হতে পারে, যেখানে এমসিকিউ ও লিখিত উভয় অংশই থাকবে। শেষে থাকবে ভাইভা। এতে প্রার্থীদের জন্য বিষয়টি সহজ হবে।”
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনের কী হবে?
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনের পরিবর্তে নতুন এই পদ্ধতিতেই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্তমানে সংশোধিত বিধিটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি গেজেট আকারে জারি করলেই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।
ক্যারিয়ার ভাবনা: নতুন পদ্ধতির জন্য কীভাবে প্রস্তুত হবেন?
এই নতুন পদ্ধতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তবে, বিশেষ বিসিএসের আদলে পরীক্ষা হওয়ায় এর প্রতিযোগিতাও তীব্র হবে।
- গভীর প্রস্তুতি: শুধুমাত্র এমসিকিউ নয়, লিখিত পরীক্ষার জন্যও গভীর এবং বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে।
- বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ: যেহেতু পরীক্ষার ধরণ बदल যাচ্ছে, তাই নতুন পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রার্থীদের বিশেষায়িত professional training বা কোচিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতির জন্য অভিজ্ঞদের পরামর্শ বা career counseling services গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কি পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাচ্ছে? উত্তর: হ্যাঁ, প্রস্তাবিত নতুন বিধি কার্যকর হলে প্রচলিত নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাবে এবং এর পরিবর্তে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্ন ২: নতুন নিয়মে বয়স কীভাবে গণনা করা হবে? উত্তর: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন প্রার্থীর বয়স যত থাকবে, সেটাই চূড়ান্ত বয়স হিসেবে গণনা করা হবে।
প্রশ্ন ৩: ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি কি আর হবে না? উত্তর: এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯তম নিবন্ধনের পরিবর্তে নতুন পদ্ধতিতেই পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এনটিআরসিএ-র এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। নিবন্ধন সনদ নিয়ে অপেক্ষার ভোগান্তি দূর হলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং কার্যকর হবে। তবে প্রার্থীদেরও মনে রাখতে হবে, নতুন এই পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন হবে আরও গোছানো এবং কৌশলগত প্রস্তুতি।
খবর থেকে আরও: মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০ সিনিয়র স্টাফ নার্স’ নিয়োগ! আবেদন অনলাইনে